Showing posts with label উপদেশ. Show all posts
Showing posts with label উপদেশ. Show all posts

Sunday, April 19, 2020

রঙিন দুনিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের করণীয়

হাতের মোবাইল দূরের মানুষটাকে কাছে নিয়ে এসেছে কিন্তু কাছের মানুষটাকে কাছে রেখেছে তো?? ফেসবুকের কল্যাণে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পেয়েছি কিন্তু পরিবারের সদস্যদের ব্লক লিস্টে রেখেছি কি?? সব কিছুর ই ভালো মন্দ থাকে। ভালো মন্দের বেড়াজালে আটকে গিয়েও ভালো টাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচার মত জ্ঞান অর্জন করছি তো?

সোশ্যাল মিডিয়া এখন আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। খুব উন্নত হয়েছি আমরা। সোশ্যাল মিডিয়া বলতেই আমরা অনেকে ফেসবুক বুঝি। স্কুলের গণ্ডি পাড় করতে না পারা মানুষটাও আজ ফেসবুক ব্যবহার করা শিখে ফেলেছে। ফেসবুকের মধ্যে ইন্টারনেট নাকি ইন্টারনেটের মধ্যে ফেসবুক তা নিয়ে সামান্য ধারণা না থাকা মানুষটাও আজ ফেসবুক ব্যবহার করছে।
আমাদের এই ফেসবুক ব্যবহার প্রশংসনীয় অবশ্যই। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার কর্রি কি না? যেহেতু ভালো খারাপে মিশ্রিত আমাদের এই সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়া। তাই ন্যূনতম জ্ঞান নিয়ে আমাদের এই জগতে আশা উচিত। কারন এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ আলোর দেখা যেমন পেয়েছে তেমনি অন্ধকারেও ধাবিত হয়েছে।

আসুন দেখে নেই আমরা বেশিরভাগ মানুষ  কি করি সোশ্যাল মিডিয়াতে

নতুন বন্ধু তৈরী বা পুরাতন বন্ধু খুঁজে বের করি
সোশ্যাল মিডিয়ার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু মানুষের সাথে যুক্ত হয়ে একটা কমিউনিটি তৈরি করা। তাই সর্বপ্রথম ই আমরা পুরাতন বন্ধুদের বা পরিচিতদের খুঁজে বের করি এবং নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করি। বন্ধুতালিকায় বেশী বেশী বন্ধু যোগ করার পেছনে বেশিরভাগের ই উদ্দেশ্য থাকে নিজের পোস্টে বেশী বেশী লাইক, কমেন্ট পাওয়া।
তাছাড়া একটা জিনিষ এখন খুব লক্ষ্য করা যায় যে বেশিরভাগ তরুন-তরুনীরা তাদের জীবন সঙ্গী খোঁজার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে তৈরি হওয়া হাজারো সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার খবর কোথাও না কোথাও প্রতিদিন  শুনা যায়। ধোঁকা খেয়েও মানুষ বিশ্বাস করতে ভালোবাসে। তাই আবার ধোঁকা খায়। তবু চিন্তার পরিবর্তন হয় না অনেকেরই।
নিজের প্রতিদিনের কার্যকলাপ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেই
সারাদিন কি কাজ করেছি, কোথায় গিয়েছি ,কার সাথে দেখা হয়েছে, কি খেয়েছি সবকিছু সাথে সাথেই জানাতে পারি আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে। এগুলোর ভালো দিক যেমন আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে।
কোথাও ঘুরতে গিয়ে সেই জায়গার ছবি দিলে যারা কখনো সেখানে যায় নাই তারা জায়গাটা দেখতে কেমন সে সম্পর্কে ধারণা পায়। যেটা একটা ভালো দিক। কিন্তু আপনি যদি আপনার আবেগ এবং দুর্বলতা সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেন তাহলে অনেকেই সুযোগ পাবে আপনার ক্ষতি করার।
বিনোদন পাওয়া বা দেওয়ার চেষ্টা
মজা নেওয়ার জন্য বা পাওয়ার জন্য  সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা অনেক কিছু দিয়ে থাকি বা বলে থাকি। মানুষ পোস্টে লাইক দিলে মন ভালো লাগে না দিলে কষ্ট লাগে। চ্যাট করে পুরাতন বন্ধু বা পরিচিতদের খবর নেয়ার পাশাপাশি নতুন বন্ধুদের সাথেও মেসেজ করে সময় কাটানো যায়। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না তা ভুলে গেলেই যত সমস্যা হয়। মেসেজ করা কখন যে নেশায় পরিণত হয় তা আমরা বুঝতেই পারি না। ফলে দিনের পর দিন অযথা ভুল মানুষের পেছনে বা সাময়িক আনন্দে সময় অপচয় করি।
এগুলা ছাড়াও আরো অনেক কিছু আমরা করতে পারি সোশ্যাল মিডিয়াতে। এবার সেগুলো একটু দেখে আসি। আর সোশ্যাল মিডিয়া বলতে শুধু ফেসবুক না। ফেসবুক ছাড়াও আছে টুইটার, লিঙ্কডিন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি।

সোশ্যাল মিডিয়ার আলো

কমিউনিটি গঠন
নিজের কর্মক্ষেত্র বা একই রকম লক্ষ্য নিয়ে যারা কাজ করে তাদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কমিউনিটি তৈরি করা যায়। ফলে একই ধরণের কাজে আগ্রহ থাকায় নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে একে অপর থেকে অনেক কিছু শেখা বা জানা যায়। অন্যদের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় যা আপনার কাজে আরো বেশী আগ্রহ তৈরি করবে।
অভিজ্ঞতা তুলে ধরা
আপনার কাজের অভিজ্ঞতা অন্যদের কাছে তুলে ধরলে তাদের সে কাজ সম্পর্কে অনেকটা ধারণা হয় ফলে তারাও সে কাজটা করতে আগ্রহী হয়। কাজটি করতে কি ধরনের অসুবিধা হতে পারে বা করলে কি সুবিধা হবে তাও বুঝতে পারবে। আর আপনি যে সে বিষয়ে অভিজ্ঞ তা অন্যরা জানতে পারলে আপনি পেশাগত ভাবে লাভবান হতে পারেন।
নিজের কাজকে সবার কাছে পোঁছে দেয়া
মনে করেন আপনি কিছু একটা তৈরি করতে পারেন তা ভিডিও করে বা তৈরির প্রক্রিয়া সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনার নিজের জ্ঞানও বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যরাও শিখতে পারবে।
রক্ত যোগাড় করা বা রক্ত দিয়ে সাহায্য করা
কারো রক্তের প্রয়োজন হলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই রক্ত যোগাড় করা সম্ভব। যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষই তিন মাস পর পর রক্ত দিতে পারে। তাই আমরা নিজের ইচ্ছায়ও রুগীর খোঁজ করে রক্ত দিতে পারি এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
অর্থ উপার্জন করা
এখন অনলাইন ভিত্তিক অনেক ব্যবসাই গড়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে বসেই মানুষ এখন বিভিন্ন ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেয়ার কাজও করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসেবে এখন অনেকেই তাদের পেশা বেছে নিচ্ছে এবং অনেক বৈদেশিক টাকাও উপার্জন করছে।
বই পড়তে উৎসাহিত করা
বই প্রত্যেকের জীবনেই অনেক গুরত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই আমরা যারা বই পড়ি, তারা নিজের পড়া বইটির রিভিউ দিয়ে অন্যকে উৎসাহিত করতে পারি। বিভিন্ন বই সম্পর্কে বন্ধুদের জানাতে পারি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই।
সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিক ব্যবহার করলে তা যে আমাদের আলোর পথে কতদূর নিয়ে যেতে পারে তা আসলে সবাই ই জানে। কত কিছু যে শেখা যায় এই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাও সবার অবগত। এখন শুধু প্রয়োজন সঠিক কমিউনিটি গঠন করা। আর সঠিক ভাবে নিজের সময়কে ব্যয় করা।
লেখায় যদি কোন ভুল থেকে থাকে বা যদি কোন বাক্য বুঝতে সমস্যা হয় তবে মন্তব্য করে জানাবেন। আপনাদের কাছে যদি আরো কার্যকরী কোন প্রক্রিয়া থাকে যা দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করেন তাহলে দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। আসুন সবাই এক সাথে সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যেকের নিজ নিজ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাই এবং একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।

লেখক প্রিয়াঙ্কা চন্দ,