Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts

Monday, November 25, 2019

সেন্টমার্টিনে পরিবেশবান্ধব পর্যটনশিল্প বিশেষ জরুরি


বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রহিয়াছে, তাহার উপর যোগ হইয়াছে মানবসৃষ্ট কারণ। মূলত মানবসৃষ্ট কারণেই বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের শৈবাল, প্রবাল, কচ্ছপ, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জলজ ও উভয়চর প্রাণী এবং পাখিসহ নানা জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হইবার পথে। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ, যথেচ্ছভাবে হোটেল-মোটেল নির্মাণ, নির্বিচারে গাছ কাটিয়া বন উজাড়, প্লাস্টিকসামগ্রীর বর্জ্যে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়াছে। ৮ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিতে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। ইহা ছাড়া প্রতিদিন গড়ে আরো ৯ হাজার পর্যটক সেখানে অবস্থান করে। ইহাতে ১৮ হাজার মানুষের চাপ নিতে হইতেছে দ্বীপটিকে।
সেন্টমার্টিনে পর্যটক আগমন বৃদ্ধি পাওয়াকে পুঁজি করিয়া গত দুই দশকে এই দ্বীপে বহু হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট গড়িয়া উঠিয়াছে অবৈধভাবে। জানা গিয়াছে, এইগুলির কোনোটাতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমতি নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এই বিপুলসংখ্যক হোটেল-মোটেল কীভাবে গড়িয়া উঠিল তাহা লইয়া প্রশ্ন থাকিয়া যাইবে। সেন্টমার্টিনকে রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসাবে সরকারের কয়েকটি সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত লওয়া হইয়াছিল; যেমন, শুধু দিনের বেলায় পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যাইতে পারিবেন, রাতে অবস্থান করিতে পারিবেন না; ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটকসহ সকলের যাতায়াত বন্ধ থাকিবে, প্রতিদিন দুটি জাহাজে ৫০০ জনের বেশি পর্যটক যাইতে পারিবে না। চলতি বছরের ১ মার্চ হইতে এই সকল সিদ্ধান্ত কার্যকর হইবার কথা ছিল, কিন্তু এখনো তাহা কার্যকর হয় নাই। সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব রাখিত। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলির এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই। কেন হয় নাই, তাহার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লইতে হইবে বইকি। তাহা ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দুঃখজনকভাবে এই ঘোষণা কেবল কাগজে-কলমে রহিয়া গিয়াছে, বাস্তবে ইহার কোনো প্রতিফলন আমরা এতদিনেও দেখিতে পাই নাই, সেন্টমার্টিন রক্ষায় সরকার এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করিতে পারে নাই।
সেন্টমার্টিনের পরিবেশ যেইভাবে বিপর্যস্ত হইয়াছে এবং যদি এইভাবে চলিতে থাকে, তাহা হইলে অদূর ভবিষ্যতে এখানকার জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণরূপে বিলীন হইয়া যাইবে। সুতরাং সেন্টমার্টিন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে এবং সেইখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনশিল্প গড়িয়া তুলিতে হইবে।


- ইত্তেফাক