Showing posts with label শিল্প-সাহিত্য. Show all posts
Showing posts with label শিল্প-সাহিত্য. Show all posts

Wednesday, January 22, 2020

তবুও ষড়ঋতু - সালমা সেঁতারা

বাংলাদেশ-ই পৃথিবীতে একমাত্র ষড়ঋতুর দেশ। আমরা বাংলাদেশীরা আমাদের ঋতুবৈচিত্র নিয়ে কতই না গর্ববোধ করি। এই চিরায়মানা ঋতুর প্রতি আমাদের অনুরাগের শেষ নেই। একেক ঋতু একেক রকম আবহাওয়ার ফুল, ফল, ফসলের সম্ভার নিয়ে আসে বাংলাদেশে।  গৃষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত, প্রতিটি ঋতুরি আলাদা মেজাজ আমাদের মানসকে মুগ্ধ করে, ভিত করে, নিঃস্বকরে, আনন্দিত করে আবার পরিপূর্ণও করে দেয়। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করেছেন এই ঋতু সৌন্দর্য সুষমা, কিন্তু আমরা মানুষরা কখনই তার শোকর বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে উল্টো প্রকৃতির সাথে গাছ কেটে, নদী ভরে অট্রালিকা করে জঙ্গল উচ্ছেদ করে রীতিমত যুদ্ধ করে চলেছি।

                বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটির চেয়ারম্যান জনাব শরীফুল ইসলাম সাহেব শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতির উন্ননয়ন শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে একটি সুন্দর কথা বললেন ‘আমরা নির্দি¦ধায় সমগ্র বাংলাদেশকে পুড়ে ঢাকা তথা শহরগুলোকে হাই রাইজ করছি’। কথাটি প্রকৃতি নিধনের সাথে সংশি−ষ্ট।

তাই প্রকৃতি রাণীরাও আমাদের সাথে যেন আড়ি নিয়েছে। তাই গ্রীষ্মে ঝড় নেই, হেমন্তে ধান নেই, বর্ষায় বৃষ্টি নেই, শীতে হিমেল নেই, বসন্তে ফুল নেই, শরতে শিশির নেই। যেমন বৈশাখে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু। ফসলের মধ্যে ইতি ধানের নবান্ন। অর্থাত আউশের প্রান্তিক। বর্ষায় পাট প্রধান ফসল, ফলের মধ্যে পেয়ারা লটকো, লেবু, আনারস প্রভৃতি। আবার শরতে উৎপাদিত উলে−খযোগ্য ফসল নেই। তবে প্রকৃতিটা যেন সুফলার আসন্ন ঋতুবতী। ফলের মধ্যে শরতের প্রধান ফল জাম্বুরা, অর্থাত বাতাবী লেবু। বাংগালী মনের সবচেয়ে প্রিয় ফুলগুলি এই ঋৃতুকে সৌন্দর্য ভালবাসা মন্ডিত করেছে। যেমন শিউলী, শাপলা ও পদ্ম। এই ফুলগুলির সাথে বাংলাদেশীদের লোকজ সংস্কৃতি অনেক গান প্রেম গাথা গল্প কথা জড়িয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। আমরা আর্টিফিসিয়াল যত ফুল-ই দেখিনা কেন? নিজের ঘরে যত যতেœই সাজাই না কেন? তবু শাপলা ভরা বিল, তার মাঝে মাঝে মাথা ইষৎ উঁচু করে অভিবাদনের ভঙ্গীতে ফুটে থাকা শ্বেত পদ্ম, শিউলীর কোমল শুভ্রতা, আল পথে বিলের বাঁকে হিজল তলায় ঝরা হিজল ফুলের, গোলাপী মখমল। এসব দৃষ্টি নন্দন পুষ্পিত চিত্র আমাদের ভীষণভাবে আনন্দ দান করে। তাইতো মনের আনন্দে কন্ঠে সুরের ঢেউ খেলে যায়। মহান দাতার দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে গাইতে ইচ্ছে করে, সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি, খোদা----- তোমার মেহেরবাণী। আল্লাহপাক আনন্দ অনুভূতি ভাষা সুর, সুরের সাতটি  স্তর দেখার দৃষ্টি মানুষকে দান করেছেন।  নিঃসর্গ তাকে পলে পলে জাগিয়ে তোলে। সুরে ও কাব্যে প্রকাশ ঘটে তার। বাঙালী বা বাংলাদেশী মাত্রই কী চাষী, কি মজুর, কি ধনি, কি ধ্যানি সকলেই মনের একান্তে কবি ও গায়ক। শুধু দারিদ্র সীমার নিচে থেকে টানা পোড়েনের নাভীশ্বাসে দৈনন্দিন কাটে, তাই ভাব সুর, কাব্য কবিতা সব কিছুই যেন অসহায় মনের নিভৃত কোনে আহত বলাকার মত পাখা ঝাপটিয়ে মরে।  তবু এ শরতের শিউলী ফোটা ভোর দু’ছত্র কবিতা লিখায়। দু’কলি গানের গঞ্জন তোলে বাঙালীর স¦ভাব সুরের কন্ঠে। ইচ্ছে করে শাল পাতায় সদ্য ফোটা ভোরের শিশির সিক্ত শিউলী এনে অর্ঘ্য রচনা করি কোন সুদূরের প্রিয়তম লাগি।

                শরত প্রায় শেষ হয়ে এলো, আর দুদিন পরেই হেমন্ত, তবে এই শরতেই বাংলাদেশের  প্রাকৃত সোনালী ফসল আমন চারা রোপন করা শেষ হয়। সদ্য লাগানো ধানের চারা প্রথমে লাল হয়ে যায়। কৃষকরা প্রতিদিন দুবেলা যত্নেনেয়। শরতের কোমল রোদ ও জলীয়বাষ্প ভরা বাতাস ধীরে ধীরে চারাগুলিকে নিবীড় ঘন সবুজ করে তোলে। চাষী ভাইরা তখন চিন্তামুক্ত হয় ধান লেগে গেল বলে। বর্ষা কেটে যাবার রেশ হিসেবে মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ধানের চারাগুলিকে শতগুচ্ছ করে তোলে।

                বর্ষায় খালে বিলে আটকে পড়া বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ এই শরতে প্রচুর ধরা পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের উদ্ভাবিত ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ধরে। আবার এই শরতেই পুকুরে মাছচাষীরা নতুন করে রেণুপোনা ছাড়ে। এসব মাছ ফাল্গুন চত্রি মাসে বড় হয়ে যায়। শীতের শেষের মাছ তুলনামূলকভাবে বর্ষার মাছের চেয়ে সুস¦াদু।

                 ষড় ঋতু এই কথাটি উচ্চারণের সাথে সাথেই মনোমুগ্ধকর কিছু প্রাকৃতিক চিত্র চোখে ভেষে ওঠে। আল্লাহপাক এক এক ভুখন্ডের মানুষের মন মেজাজ এবং প্রকৃতি বিচার করেই যেন তাদের, আবাস ভুমির জল হাওয়া ও পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তবে বৎসরে ছয়টি বিচিত্র রূপের ঋতু বা মৌসুম, এমন সুষমা মাধুর্যে ভরে একমাত্র বাংলাকেই দান করেছেন।  এদিক থেকে বাংলাদেশ ধন্য।

                আল্লাহ বলেছেন, “আমার সৃজিত যা কিছু সুন্দর  আছে, আমার বান্দারা যদি তা অবলোকন করে মুগ্ধ হয়ে বলে, “সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য” তাহলে তার উপর আমি খুশি হয়ে আমার রহমত বর্ষণ করি। আর বান্দার মনকে প্রশান্তিতে ভরে রাখি। যে প্রকৃতিকে ভালবাসবে সে সন্ত্রাসী জিঘাংসা প্রিয় হতে পারে না।  প্রকৃতির সৌন্দর্য তার মনে অবশ্যই কোমলতা আনবে এবং চিত্তকে দয়ার্দ্র করে দেবে।

                কিন্তু কষ্টের বিষয় আমরা শুধু প্রকৃতিকে উপভোগ করতে জানি, দেখে দেখে দৃষ্টিতে মুগ্ধতা আনি, কিন্তু প্রকৃতিকে লালন করি না। প্রয়োজনের দাবানলে গাছ কেটে, মাছ মেরে, ফুল ছিড়েঁ ঘর তুলে, ষড় ঋতুর সৌন্দর্য ছড়াবার আধারগুলিকে জ্বালিয়ে দিয়েছি।

                হিন্দু বিশ্বাসে প্রকৃতি দেবীতুল্যা। হিন্দু সম্প্রদায় প্রকৃতিকে অনেক ভক্তি অর্ঘ্য দিয়ে থাকেন। তাদের বিশ্বাসে কৃষ্ণই প্রকৃতি, আবার প্রকৃতিই কৃষ্ণ। আমরা মুসলিম সম্প্রদায় প্রকৃতির কোন ক্ষমতায় বিশ্বাসী নই। আমাদের ধর্ম বিশ্বাসে প্রকৃতির যা কিছু সুন্দর এবং ঐশ্বর্য সবই আল্লাহপাকের দান। প্রকৃতির কোন ক্ষমতা নেই। প্রকৃতির ক্ষমতায় বিশ্বাসী হলে ‘শেরেক অর্থাৎ অংশীবাদ’ এর মতো পাপ করবো। দুদিকে দুবিশ্বাস থাকলেও, ভাল লাগা এবং প্রশান্তি একই মানব মনের অনুভব এবং প্রকাশ। তাই ভাল লাগাটা কারও ভিন্ন হতে পারে না। মুগ্ধতা সবার হƒদয়ের অধিকার। উচ্ছাস বা প্রেমের রূপ একই মানব মনন থেকে উৎসারিত।

                ভারতেশ্বরী ইন্দীরা দেবী স¦ীয় পুত্র রাজীব গান্ধীকে ছোট বেলায় নাকি বলতেন যখন তোমার মনে দুঃখ আসবে, কিংবা কোন অস্থিরতা তোমাকে তাড়া করবে, তখন তুমি নিশ্চুপ হয়ে প্রকৃতির কোন এক সৌন্দর্যের প্রতি তাকিয়ে থাকবে। তাহলে দেখবে তোমার মন এক অনাবিল আনন্দে ভরে গিয়েছে। কথাটা অত্যন্ত সত্যি। যেমন ধরুন শরৎ, শরৎ রাতের অভ্রমাখা চাঁদের আলো, কোন মানব মানবীর নীবিড় প্রেমকে জাগিয়ে তোলে না? ভাল লাগা কোনো গানের কলি, কন্ঠে সুর হয়ে বেরিয়ে আসে না; এমন লোক মনে হয় খুঁজে পাওয়া ভার। সন্ধাকালীন মিষ্টি আঁধারে গাইবে কোনো অপেক্ষমানা, এখনি উঠিবে চাঁদ আধো আলো আধো ছায়াতে---------। শরতের দুটি বিখ্যাত ফুল শিউলী ও পদ্ম। বাংলা সাহিত্যে এমন কোন কবি সাহিত্যিক নেই যে তার সাহিত্যকে মধুর করে তোলেনি শরতের শিউলী ফুলকে উপমা করে। এক সময় যখন আউস ধানের পালিত এর উপর গ্রামের মানুষ নির্ভর করতো কিন্তু তার ফলন ছিলো ভীষণ অপ্রতুল। যারা ছোট চাষী সামান্য কিছু ধানি জমি আছে, তারা আমন মৌসুম ধরতে পারত না। আর ভুমিহীনরা তো মোটে খেতেই পেতনা। তখন কাউন চিনা বাজরা এসব কিছু ফাক সময়টাতে মানুষ ভাতের বদলে খেত। সেটা বড় গৃহস্থদের ঘরে-ই থাকতো। ভাদ্র আশ্বিন ও কার্তিক এই প্রান্তিকটা ছিল ভীষণ অভাবের কাল। আমাদের দেশে ইরিগেশন হবার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৭০ এর দশক পর্যন্ত। অতপর যুদ্ধোত্তর ৭৪ পর্যন্ত বাংলার গ্রামীণ জীবন খাদ্য পুষ্টি ও সর্বোপরি আউশের মৌসুম বনজ ও রবি শষ্য নির্ভর ছিলো। গরীবরা বিলের মাছ শাপলা বনজ শাকসব্জি লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারন করতো। যেমন- কচু শাক লতা ছড়া সেটে আলু থানকুনি শাক মেঠো শাক বন পুঁই ঢেকি শাক হেলেঞ্চা কলমী এসব খেতো। আর এতে করে মানুষের কলেরা (ওলা ওঠা) লেগেই থাকতো। বিগত তিন দশক ধরে ইরি আউশ মৌসুমে ইরি প্রচুর পরিমাণ ফলন হওয়াতে মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারছে।

                আবার হেমন্তকালে আমন আসে। শীত ও হেমন্ত কেটে যায় বাংলার গ্রামীণ মানুষের মোটামুটি ডাল ভাত মাছ তরকারী খেয়েপরে এক প্রকার সুখে। শহুরে মানুষের কোন মৌসুমের বালাই নেই। সেখানে শীত গ্রীষ্ম শরৎ হেমন্ত বসন্ত সব এক রকম। সেখানে ভোক্তারা এসবের ধার ধারে না। এসব উৎকন্ঠা ব্যবসায়ীরাই সামলে থাকে। এ জন্যই প্রবাদ বলে যদি পড়ে কহর/তবু না ছাড়ি শহর।

                আবার ফাল্গুন চত্রি মাস বসন্তকাল। এই সময়টাও একটা ফসলের ফাক সময়।  এই সময়ও মানুষ পুনরায় অভাব কবলিত, বসন্ত খরার মৌসুম। এই  সময়  প্রকৃতিও  ভীষণ  অফলা  বলে বনজ
কিছু নেই। নদী সোঁথাগুলো শুকিয়ে যায়। তখন একটা জিনিষ শুকিয়ে যাওয়া নদীতে পাওয়া যায় তা হচ্চে শালুক ও পদ্ধের বীজ। এসব পুড়িয়ে রান্না করতো আগে। বিশেষ করে বনকচুর ছড়া খুবই উপাদেয়। এসব গৃহস্থরাও গরীবদের নিকট চালের বিনিময়ে টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে সখ করে রান্না করে খেতো। এর ফলেই বীজ ধ্বংস হয়ে শাপলা পদ্ম কচু দিন দিন বিলুপ্তির পথে।

এখন আবার দেখা যাচ্ছে শাপলা ও পদ্ম ফুল শহরে কেউ কেউ তুলে এনে বিক্রি করছে। কিন্তু এই ফুল দুটি জলজ ফুল হওয়াতে  এটা দিয়ে গাড়ী বা তোরণ সাজানো যায় না। কারণ এর সজীবতা ভীষণ ক্ষণস্থায়ী। এভাবে যদি বিল থেকে উজাড় করে শাপলা পদ্ম তুলে আনা হয় তাহলে এক সময় প্রকৃতির কোল থেকে এ ফুলও হারিয়ে যাবে।

                পৌরানিককালের গল্প, কোন যুবক, রাজ কন্যার প্রেমে পড়লে, প্রেমের অভিপ্রায় পূর্ণ হবার মানষে ঋষীর স্মরনাপন্ন হলে, ঋষী বলতেন “হে বৎস, একশো একটা নীল পদ্ম যদি দেবতার পায়ে অর্ঘ্য দিতে পার তবেই প্রেমে জয়ী হবে”। আসলে কি নীল পদ্ম ছিলো? নাকি প্রেমের অর্ঘ্য দিতেই নীল পদ্ম বিলুপ্ত হয়ে গেছে? আসলে কথাটার অর্থ মনে হয় অসাধ্যকে সাধন করা। নীল পদ্ম বলে কিছু ছিল না। তবে আমরা এই তিন দশক আগেও বিলে শ্বেত পদ্ম দেখেছি, এখন আর নেই বললেই চলে। অবশিষ্ট রইলো গোলাপী পদ্ম। তবে এখন বিরল হয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার অর্ঘ্য দিতে গিয়ে।

                বাষ্পায়িত বিলের পানি শিশির হয়ে শিউলী আঘ্রান করার জন্য বাড়ীর আঙ্গিনায় আসতো। এখন বিভিন্ন কারণে শিউলীর স্থান বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে সড়ক দ্বীপে হয়েছে। তাই শিশিরের প্রেমভারে সদ্য ফোটা শিউলী আর লুটিয়ে পড়ে না আঙিনায়।

                ধীরে ধীরে শ্রষ্ঠার দান এ সুন্দর প্রকৃতি আমাদের চারিপাশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরি নিধন যজ্ঞে। আসুন আমরা সকলে মিলে আল্লাহপাকের দান এই প্রকৃতির ঐশ্বর্ষকে আমাদেরি প্রশান্তির স্বার্থে লালন করি।

ষড় ঋতুর প্রত্যেক ঋতুই আমাদের জন্য বিধাতার আশীর্বাদ স¦রূপ। জন্ম আমার ধন্য হলো মা----গো---- এমন করে আকুল হয়ে আমা---য় তুমি ডাকো। সত্যি আমাদের দেশের এই ঋতু বৈচিত্র অন্তর মন মন্থন করে আনন্দ অশ্র“ ঝরায় আর সে অশ্র“ই যেন ঘাসে ঘাসে পদ্ম পাতায় টলমল শিশির হয়ে খেলা করে। অনন্য হে শ্রষ্ঠা তুমি আমাদের দান করেছো এতো সুন্দর প্রকৃতি। সেটাকে লালন করার জন্য আমাদেরকে তুমি ক্ষমতা দাও।

Saturday, August 11, 2018

কান্ডারী হুশিয়ার! - কাজী নজরুল ইসলাম


দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার 
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! 

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, 
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ? 
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। 
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। 

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান! 
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান। 
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান, 
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার। 

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন 
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন। 
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? 
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার 

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ, 
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ! 
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ? 
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার! 

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, 
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর! 
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! 
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার। 

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, 
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান 
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ? 
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

সংকল্প - কাজী নজরুল ইসলাম


থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,- 
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে। 
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে 
ছুটছে তারা কেমন করে, 
কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে, 
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরণ-যন্ত্রণারে।। 

কেমন করে বীর ডুবুরী সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে, 
কেমন করে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বরগ পানে। 
জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি 
যুদ্ধ-জাহাজ চলছে ছুটি, 
কেমন করে আঞ্ছে মানিক বোঝাই করে সিন্ধু-যানে, 
কেমন জোরে টানলেসাগর উথলে ওঠে জোয়ার বানে। 

কেমন করে মথলে পাথার লক্ষী ওঠেন পাতাল ফুঁড়ে, 
কিসের অভিযানে মানুষ চলছে হিমালয় চুড়ে। 
তুহিন মেরু পার হয়ে যায় 
সন্ধানীরা কিসের আশায়; 
হাউই চড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিন পুরেঃ 
শুনবো আমি, ইঙ্গিত কোন 'মঙ্গল' হতে আসছে উড়ে।। 

কোন বেদনার টিকিট কেটে চন্ডু-খোর এ চীনের জাতি 
এমন করে উদয়-বেলায় মরণ-খেলায় ওঠল মাতি। 
আয়ার্ল্যান্ড আজ কেমন করে 
স্বাধীন হতে চলছে ওরেঃ 
তুরষ্ক ভাই কেমন করে কাঁটল শিকল রাতারাতি! 
কেমন করে মাঝ গগনে নিবল গ্রীসের সূর্য-বাতি।। 

রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়, দেখব এ-সব ভুবন ঘুরে- 
আকাশ বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে। 
আমার সীমার বাঁধন টুটে 
দশ দিকেতে পড়ব লুটেঃ 
পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, ওঠব আবার আকাশ ফুঁড়েঃ 
বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।।

হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক - কাজী নজরুল ইসলাম


হিন্দু-মুসলিম দুটি ভাই 
ভারতের দুই আঁখি তারা 
এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম চারা।। 

যেন গঙ্গা সিন্ধু নদী 
যায় গো বয়ে নিরবধি 
এক হিমালয় হতে আসে, এক সাগরে হয় গো হারা।। 

বুলবুল আর কোকিল পাখী 
এক কাননে যায় গো ডাকি, 
ভাগীরথী যমুনা বয় মায়ের চোখের যুগল ধারা।। 

ঝগড়া করে ভায়ে ভায়ে 
এক জননীর কোল লয়ে 
মধুর যে এ কলহ ভাই পিঠোপিঠী ভায়ের পারা।। 

পেটে ধরা ছেলের চেয়ে চোখে ধরারা মায়া বেশী, 
অতিথী ছিল অতীতে, আজ সে সখা প্রতিবেশী। 
ফুল পাতিয়ে গোলাপ বেলী 
একই মায়ের বুকে খেলি, 
পাগলা তা'রা আল্লা ভগবানে ভাবে ভিন্ন যারা।।

Wednesday, August 8, 2018

বস্তীর মেয়ে - জসীম উদ্‌দীন

বস্তীর বোন, তোমারে আজিকে ছেড়ে চলে যেতে হবে,
যত দূরে যাব তোমাদের কথা চিরদিন মনে রবে।
মনে রবে, সেই ভ্যাঁপসা গন্ধ অন্ধ-গলির মাঝে,
আমার সে ছোট বোনটির দিন কাটিছে মলিন সাজে।
পেটভরা সে যে পায় না আহার, পরনে ছিন্নবাস,
দারুণ দৈন্য অভাবের মাঝে কাটে তার বারোমাস।
আরো মনে রবে, সুযোগ পাইলে তার সে ফুলের প্রাণ,
ফুটিয়া উঠিত নানা রঙ লয়ে আলো করি ধরাখান।
পড়িবার তার কত আগ্রহ, একটু আদর দিয়ে,
কেউ যদি তারে ভর্তি করিত কোন ইস্কুলে নিয়ে;
কত বই সে যে পড়িয়া ফেলিত জানিত সে কত কিছু,
পথ দিয়ে যেতে জ্ঞানের আলোক ছড়াইত, পিছু পিছু!
নিজে সে পড়িয়া পরেরে পড়াত, তাহার আদর পেয়ে,
লেখাপড়া জেনে হাসিত খেলিত ধরনীর ছেলেমেয়ে।

হায়রে দুরাশা, কেউ তারে কোন দেবে না সুযোগ করি,
অজ্ঞানতার অন্ধকারায় রবে সে জীবন ভরি।
তারপর কোন মূর্খ স্বামীর ঘরের ঘরনী হয়ে,
দিনগুলি তার কাটিবে অসহ দৈন্যের বোঝা বয়ে।
এ পরিনামের হয় না বদল? এই অন্যায় হতে
বস্তীর বোন, তোমারে বাঁচাতে পারিবনা কোনমতে?
ফুলের মতন হাসিখুশী মুখে চাঁদ ঝিকি মিকি করে,
নিজেরে গলায়ে আদর করিয়া দিতে সাধ দেহ ভরে।
তুমি ত কারুর কর নাই দোষ, তবে কেন হায়, হায়,
এই ভয়াবহ পরিনাম তব নামিছে জীবনটায়।

এ যে অন্যায়, এ যে অবিচার, কে রুখে দাঁড়াবে আজ,
কার হুঙ্কারে আকাশ হইতে নামিয়া আসিবে বাজ।
কে পোড়াবে এই অসাম্য-ভরা মিথ্যা সমাজ বাঁধ,
তার তরে আজ লিখিয়া গেলাম আমর আর্তনাদ।
আকাশে বাতাসে ফিরিবে এ ধ্বনি, দেশ হতে আর দেশে,
হৃদয় হইতে হৃদয়ে পশিয়া আঘাত হানিবে এসে।
অশনি পাখির পাখায় চড়িয়া আছাড়ি মেঘের গায়,
টুটিয়া পড়িবে অগ্নি জ্বালায় অসাম্য ধারাটায়!
কেউটে সাপের ফণায় বসিয়া হানিবে বিষের শ্বাস,
দগ্ধ করিবে যারা দশ হাতে কাড়িছে পরের গ্রাস।
আলো-বাতাসের দেশ হতে কাড়ি, নোংরা বস্তী মাঝে,
যারা ইহাদের করেছে ভিখারী অভাবের হীন সাজে;
তাহাদের তরে জ্বালায়ে গেলাম শ্মাশানে চিতার কাঠ,
গোরস্তানেতে খুঁড়িয়া গেলাম কবরের মহা-পাঠ।
কাল হতে কালে যুগ হতে যুগে ভীষণ ভীষণতর,
যতদিন যাবে ততজ্বালা ভরা হবে এ কন্ঠস্বর।
অনাহারী মার বুভুক্ষা জ্বালা দেবে এরে ইন্ধন,
দিনে দিনে এরে বিষায়ে তুলিবে পীড়িতের ক্রন্দন।
দুর্ভিক্ষের স্তন পিয়ে পিয়ে লেলিহা জিহ্বা মেলি,
আকাশ-বাতাস ধরণী ঘুরিয়া করিবে রক্ত কেলি।


---মাটির কান্না

তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক


তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচণ্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুড়ে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

Tuesday, August 7, 2018

পাথর সময় – মাহমুদশাহ




অামাতে অামি অামার বিকল্প খূঁজি,
অাত্মবিসর্জনেও সত্যিটা জানার অাগ্রহ,
মনের অজান্তে নিজেকে বিসর্জন দেই
অাত্মবিশ্বাস ছাড়া নেই অন্য পূঁজি।
কঠিন সময়ের ব্যাবধানে সবই তুচ্ছার্থে
পূঁজারী ফুল হাতে কষ্টের নিমন্ত্রণে
অাচমকা ঝরো হাওয়া বদলে দেয় সবকিছু,
দেবতাকে ডাকি শুধুই  নিজের স্বার্থে।
মায়াবোধের গোলক ধাঁধায় সবাই অাপন,
সময়ের প্রয়োজনে পথচলার সাথী খূঁজি,
গন্তব্যের শেষে কেউ থাকেনা পাশাপাশি,
মিছে সবকিছু অাত্মার অাত্মীয় বন্ধন।
মনের দোলনায় দোলে প্রভাতী ভৈরবী,
যুগের রবি উঠে মহাকাশ ফুঁড়ি মন অাকাশে,
হাসিতামাশার দিন এলো বুঝি ধরায়,
মনবৈরাগী খূশীর সাধে দুঃখ ভুলেছে সবি!
ক্ষুধিত মনের ক্ষুধা মিটে গেছে অল্প অল্প করে,
রক্ত-লেখায়  সর্বনাশ ভুলে গেছে সব থেকে,
ক্ষেপা হৃদয়ের অগ্নি নিঁভে যায় সূহৃদের বাণে
স্বপ্নের দিন গুনে অভিবাদনের ডালা রেখেছি ভরে।

স্বর্গের লীলাভূমি – সাজেদা আক্তার রানী




অপরূপ সুন্দর এই দেশে সূর্য উঠে পূর্বদিকে
পান্তা বাসি খেয়ে কৃষক খুব সকালে উঠে
লাঙল গরু দিয়ে চাষ করতে যায় মাঠে।
গ্রামের মেঠো পথটি ধরে গরুর গাড়ি চলে
রাখাল বন্ধু বাঁশী বাজায় বসে কদম তলে
নানান ফসল খেলা করে ষড়ঋতুর এই আবেশে ৷
সবুজ শ্যামল মায়ায় ঘেরা স্বর্গের লীলাভূমি
খাল বিল নদী মাছের খনি দেখে জুড়ায় চোখেরমনি
মায়ের মত এমন দেশটি কোথায়ও পাবে না তুমি।
মায়াবী চিত্র ফুটে পশ্চিমে সে মিলায় শেষে
পাখি বসে বৃক্ষ শাখে রক্তিমলাল দিগন্ত ঢাকে
দূরের বিলে পদ্ম ফুটে মিটি মিটি হাসে ।
মাঠে মাঠে সোনার ফসল হাওয়ায় খেয়ে দোলে
সবুজ-শ্যামল মাঠ প্রান্তরে ফুলে ফলে ভরে
পালকি চড়ে নব বধূ শ্বশুর বাড়ি যায় চলে।
বর্ষা এলে গ্রাম গুলো দ্বীপের মত ভাসে
বাদল-ধারা ছিন্নমূল এ মনে আনন্দ আসে
চির চেনা বাংলার বুকে দিন কাটে কত যে সুখে ৷

প্রতীক্ষার অবসান - সাজেদা আক্তার রানী



ভালোবেসে তোরে মন দিয়ে হায়
করেছি যে মস্ত বড় ভুল,
তোর বুকের ভেতর কখনো আমি
পাইনি খুঁজে কোন কূল ।
দিনে দিনে দু’জনার মাঝে
বাড়ছে শুধুই রেষ আর রেষ,
ভালোবাসাই অপরাধ আমার
তাইতো পুড়ে হচ্ছি শেষ।
অবশেষে তুই আবার এলি ফিরে
এখন দরকার নেই সীমানার,
জাত-কূল যা যাবার সেতা গেলো
তাই ধার-ধারি না কারো আর।
সীমাহীন দূরে ঐ নীল আকাশ
মাটির কাছে না টেনে আনা যায়,
হাজার দূরত্ব তাদের মাঝে তবু
তাদের ও মিলনটা হয়ে যায়।
বলবি তুই কেমন করে এটা
মিথ্যে বলে সাজাচ্ছি কবিতা,
না মিথ্যে নয় এতে আছে সত্যতা
আমার কাছে আছে সেই ছবিটা।
আকাশ ও মাটির মিলন হয় সেটা
এতো দূরত্ব থাকার ও পড়ে,
তুই আর আমি তো একি দুনিয়ার
তাহলে কেনো তোরে পাবো না ফিরে।
প্রতীক্ষার অবসান হলো অবশেষে
বদ্ধশ্বাস আমার পেয়েছে জোর,
অবশেষে তুই আর আমি এক হয়ে
অন্ধকার চিরে এনেছি ভোর।
অবশেষে ইতিহাস হলো গদ্যে পদ্যে
ছন্দে উপন্যাসে কাহিনী গাঁথা,
অধীনতা স্বাধীনতা সুখ দুঃখ মিলেমিশে
লিখা হবে নতুন কাহিনী নতুন পাতা।

আগামীর সন্তান – মাজু ইব্রাহীম



হে আগামীর সন্তানেরা
তোমরা এগিয়ে এসো-
ভাঙ্গো প্রথার ধার?
রবে কি চিরদিন বঙ্গকাশে
আলোহীন আধাঁর।
দু’সূর্য্যের চির আধিপত্যে
পুড়ে ছারখার,
চাঁদ খানাও নিথর সদা
নেই তার পার।
বার বার জন দূভোর্গ
খুন,ঘুম, হানাহানি-
রক্তপাত চলছে অবিরাম
দুর্বল টানছে ঘানি।
ক্রন্দন আর চিৎকার যেন
দিকে দিকে বার বার,
কলমের বদলে চাপাতি
কে আজ ছাত্র কার?
হে আগামীর সন্তানেরা
কাঁদিতে চাইনা?
একটু বাঁচতে চাই-
এক ঝলক হাসতে চাই।
দেখিতে চাই এক আকাশে
এক সূর্য্যদয়-
চলিতে চাই আগামীর পথে
শান্তিতে নির্ভয়।

গোল উৎসব – কামরান চৌধুরী



গোল গোল গোল, উঠেছে দর্শক মেতে, গোল-গোল উৎসবে,
রেফারির বাঁশি, লাইন্সম্যানের ফ্লাগে, পায়ে পায়ে বল চলে।
ছন্দে ছন্দে গতিময়তায় বিপক্ষের হৃদয়ে কাঁপন তোলে
করতালি, উচ্ছ্বাসে-উচ্ছ্বাসে, রুদ্ধশ্বাসে আনন্দ-অশ্রু ভাসে।
মূহুমূহু আক্রমণ প্রতি আক্রমণে দু’পক্ষের লড়াইটা জমে
খেলার মাঝে দর্শকশ্রোতার জীবনে ক্ষণিক দুঃখ কমে।
ছন্দবদ্ধ গতি নৈপুণ্যের যাদু, মুগ্ধতায় সুখী বিশ্ববাসী
টানটান উত্তেজনা আনন্দ বেদনা চোখে-মুখে কান্না-হাসি।
গোলের তরে অপেক্ষার প্রহর, রক্ত কণায় কণায় টান
দেশের গৌরবে যুদ্ধ করে খেলোয়াড়, বিশ্বে রেখে যাবে মান।
খেলার এই উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে
বেঁচে থাকে মানব অন্তরে আজ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
ফুটবলের রথী মহারথীরা একে একে সবাই ঝরেই গেল
জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ব্রাজিল কোথায় হারিয়ে গেল।
রোনালদো, মেসি, ইনিয়েস্তা, নেইমার, সুয়ারেজ, হ্যারিকেন
লুকাকো, হ্যাজার্ড, ওয়ের্নার হেরেও অন্তরে যে ঠাই পেল।
গ্রিজমান-এমবাপ্পে, মদরিচ-পেরিসিচ জুটির খেলায়
বিশ্ব মেতে ওঠে গতি নৈপুন্য আর ছন্দের দোলায় দোলায়।
বিশ্বকাপ ফুটবল আসর থেকে ঝরলো একত্রিশ দেশ
স্বপ্নের বিজয় কাপ ঘরে তুলে নিল ফ্রান্স হাসি হাসি মুখে।
দেখেছে বিশ্ব, জেগেছে বিশ্ব, শিখেছে খেলার অনিন্দ্য কৌশল,
নতুন ভাবে নতুন পণে, রণাঙ্গনে আসবে অদম্য দল।।
১৫ জুলাই, ২০১৮।। শ্যামলী, ঢাকা।।

টাকা – এম এস হাবিবুর রহমান

 
 
টাকা – এম এস হাবিবুর রহমান  

সবাই বলে টাকা চাই টাকা
টাকা ছাড়া না-কি জিবনটা থাকে ফাঁকা।
আমি বলি জিবনটা চলে;
রাস্তা, নদী সাগরের মত হয়ে আকা-বাকা।
কখনো চাই টাকা,
কখনো বা রূপসির ভালোবাসা।
হায়! এই মন বলে তাই
আর কি চাই, তাও জানা নাই;
কষ্ট পাই একি অবলিলায়।
কেন ভাই!
সবাই বলে টাকা চাই টাকা
আমিতো পেলাম ভাই টাকা আর ভালোবাসা,
তবুও কেন মনে হয় এ জিবন পূর্ণ নয় ?
আরো কিছু চাই থাকা।
টাকা নয় ভাই টাকা
আমার ইচ্ছে ভাই,
শেষ বেলায় বলে যাই
পৃথিবীর মাঝে অনন্ত কাল বেঁচে থাকা।