Showing posts with label মোঃ কামরুজ্জামান বাবু. Show all posts
Showing posts with label মোঃ কামরুজ্জামান বাবু. Show all posts

Thursday, April 9, 2020

আপনা মাংসে হরিণা বৈরি

মেঘে মেঘে বেলা কম হয়নি, অষ্টপ্রহর বদলের প্রবাহও থেমে নেই, চন্দ্র-সূর্যের ওঠা নামাও থেমে থাকেনি ক্ষণকালের জন্যও, বাতাসে শিসার পরিমাণ যতোই বাড়ুক, থেমে থাকছে না, ঝড় তুফানেও নরেন মুদির দোকান খোলা বন্ধ থাকছে না, আমাদের ছোট্ট গলির বখাটে ছেলেদের বুড়বুড় করে সিগারেট ফুঁকা বন্ধ হচ্ছেনা, পাড়ার সবচেয়ে ভদ্র , শিক্ষানুরাগী তাপসীর লেখাপড়া থেমে নেই বখাটেদের শত বাজে অশ্রাব্য কথোপকথনেও । কিচ্ছু থেমে নেই, কিচ্ছু না ।

রোদসী, তোর বয়স আর কতো ? চার কিংবা পাঁচ হবে ? আমি তোকে এইসব চলমান স্থানে যেতে বারণ করি। তোকে খুব ভয়ে স্কুলে নিয়ে যাই, নিয়ে আসি । বাইরে যেতে না দিলেই নানান প্রশ্নের বান ছুঁড়ে দিস প্রতিদিন। আমি কি করে বোঝাবো তোকে ? এইসব শব্দগুলো বোঝার কি কোন বয়স তোর হয়েছে ? যখন ষাট বছরের ভ্যাদা বুড়োভাম লালচে দাঁত আর যে চোখে তোকে বলেছিল- দাদুভাই, কোলে আসো, চকোলেট দিব । তুই বিঝিসনি মামণি, আমি তার চোখের দৃষ্টিতে প্রবৃত্তির এক নোংরা ছাপ দেখেছিলাম। নপুংশকতার প্রবৃত্তি, তুই বুঝবি না। আমি কপাল চাপড়াই-কেনো প্রশ্ন করিস ?

তোকে বোঝাবার ভাষা আমার নেই, সেই ভাষা তোকে বোঝাবার নয়। জানিস না, আজকাল ও-পাড়ার চাপা, বেলি, রোজিরা বাগানের বাইরে গন্ধ বিলোবার আগেই গন্ধ কু-প্রবৃত্তির মনমানসিকতার লোকেদের নাসারন্ধ্রে পৌঁছায়। অনেকটা আপনা মাংসে হরিণা বৈরি- এমনটাই কিন্তু তা তাপসী এই আক্ষেপটা করে, আমাকে বলে, আমি বুঝি, নিজের বৈরিতা নিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সেই কান্না বোঝার সময় তোর হয়নি।
আমার মানসিকতাও বোধ হয় পশুস্তরে পৌঁছে গিয়েছে। 

আমার কাজের ব্যাস্ততায় তোকে তোর বাবার কাছে রেখে কিছুক্ষণের জন্য আড়াল হলেই দু-দন্ড কর্ম সেরেই বিচলিত স্বরে হাঁক ছেড়ে বলি- এই ওকে ছেড়ে দাও, আমার কাছে আসুক, কাজের ক্ষতি হবে না, আদর করারও সময় পাই না। এ আমার হীনমন্যতা হলেও আমি তা মোটেও কাটাতে পারবো না। যাই হোক, তবুও বলি- আমার কাছে পাঠাও না ! রোদসী ! মা ! 
-
মোঃ কামরুজ্জামান বাবু

নাশপাতি

নাদেরের মা যথারীতি আজও কাজে যাবার পথেই চার বছরের ছেলে শমু তার পথ আটকায়।আদতে নাদেরর কখোনও কোন চাওয়া বা বায়না থাকেনা। যত্তোসব আজব, জটিল বায়না মায়ের কাছে শমুর।নাদেরের মা আলতো করে ছেলেকে জোর করে সরিয়ে নাদেরের চোখে চোখ রেখে বলে যায়,
যেনো সে তার ভাইটার খেয়াল রাখে।নাদেরের মায়ের নাম জোবেদা।সে ঘরের বাইরে যেতে যেতে আঁচলে চোখ মুছে।

জোবেদাদের ইদের আমেজ শুরু হয় রাতে।বাসি,পচা, উচ্ছিষ্ট সেমাই, পোলাও কোর্মা দিয়ে। সে এভাবেই চলে আসছে বেশ অনেকদিন।কিন্তু জোবেদা একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে যে নাদের কখনোই এসব খাবার ছুয়েও দেখেনি, কোনদিনও না। জোবেদা আশ্চর্য হয়,তার ছেলে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলেও ওসব খাবারের দিকে তাকিয়েও দেখে না।ভালো একটা ব্যাপার হলো- সে খাবারের জন্য কাদেও না।

সোহেল রহমান খানের বাসায় কাজ করছে সেই ষোলো বছর বয়স থেকে। সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত লোক।জোবেদা মোটেও তার সাহেবকে ভয় পায় না,ঘেন্না করে। যদিও তার স্ত্রীর সাথে খুব ভাব জোবেদার।সোহেল সাহেবের স্ত্রীর কড়া হুকুম - একটা কাজেও যেনো কোন সমস্যা না হয়। অবশ্য সোহেল সাহেবের স্ত্রী শর্মিলার কথায় জোবেদা জীর্ণ মুখে সায় দেয়।

শর্মিলা বের হয়েছে এবং কোথায় গিয়েছে -তা জোবেদা জানে।পলাশের সাথে বিছানায় যাবাব আগেও বহুবার বিছানা ঠিক করে দিয়েছে। আজ যে গিয়েছে,তা জোবেদা জানে সহজে ফিরবে না।ইদ বলে কথা!

সোহেল সাহেব পেছন থেকে জোবেদার কোমর ধরতেই রাক্ষুসে চোখ নিয়ে তাকায়।খুন্তি টা নিয়ে শাসিয়ে চাপা গলায় বলে,জামাই বউ দুইজনে একইরকম অসুব্ব্যা। সোহেল সাহেব হায়েনার মতো হাসে।জাবেদা বলতেই থাকে। শেষে মুখে কাপড় গুজে চোখ ফিরিয়ে বলে, " আপনের পোলা যেইটা আমারে পেট বানাইয়া দিছেন, আপনের বউ দেইখাও না দেখার ভান কইর‍্যা ছিলো- সেই নাদের বড় হইছে। আপনে সরেন,আপনেরে দেহলে আমার ঘিন্না লাগে "।
- মোঃ কামরুজ্জামান বাবু

অতঃপর একটাই চূড়ান্ত আক্ষেপ আমার

 
মোঃ কামরুজ্জামান বাবু 
একটাই আক্ষেপ আমার  - কারো ভাবনা হতে পারিনি ;
একটাই প্রাপ্তি আমার      - কেউ ভাবনা হতে পেরেছে ।
একটাই কষ্ট আমার        - কারও ভালো বন্ধু হতে পারিনি;
একটাই সুখ আমার        - কখনো কারো নিঃসঙ্গতায় ঠাই পেয়েছি।
একটাই অবসাদ আমার - স্বর্ণালী সুযোগ হেলায় ছুঁড়েছি ।
একটাই শ্রান্তি আমার     - তবুও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি ।
একটাই বিষাদ আমার   - তাকে ধরে রাখতে পারিনি ;
                                 ছোট ছোট শব্দেই তাকে বেলা-অবেলা
                                 হেলা-ফেলা , আগলে রাখতে ছুঁইয়ে দিতাম
                                 বর্ষার সিক্ত কদমের সাদা হুল পাঁপড়ি ,
                                 অতঃপর একটা পলক ওর দীঘিজল চোখে -
                                 বলেছিলাম,ওকে সমুদ্রজল দেখাবো,পাহাড়,
                                 ঘাসফুল,কাশফুল , ঘাসফড়িঙ আর এই-সেই ,                               
 পৃথিবীর সব দেখাবো ,সব-ই । 

                                  ও খিলখিল হেসে বলেছিল ,
                                  "এক রত্তিও মিথ্যে নয় সোনা আমার , 
                                   আমি সব-ই দেখেছি।

একটাই প্রশ্ন আমার     - ও কী তবে সান্ত্বনা দিয়েছিলো ?
                          ও কী অনেক আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল ওর মৃত্যু ?
                         ওর রেখে যাওয়া চিঠি,"এই,আমার হাতের এলোমেলো
                    লিখা পড়তে গিয়ে বকো না।যা বলছি,মন দিয়ে শুনে নাও
                   শব্দের শব্দে।আমি তোমার চোখে যে অপলক চেয়ে চেয়ে
                        সমুদ্র দেখেছি , আমি ঢেউয়ে ভেসেছি সত্যি ,জানো ?
                      ঘাসফুল , কাশফুল , বুনোফুল , আকাশ -আরো কতো !!
                       তোমাকে ভালবাসতে বাসতে আর এতকিছু একসাথে
                     দেখে স্রষ্টার সৃষ্টিকে তুচ্ছ করার সাহস আমার হয়নি যে !

একটাই দোষ আমার    - তাকে ভালবাসতে পারিনি । বুঝিনি ।
একটাই স্বীকারোক্তি আমার-আমি আমার সুখের সুখকে মূল্য দেই নি।
অতঃপর একটাই চূড়ান্ত আক্ষেপ আমার - এভাবেই প্রাপ্তি , কষ্ট , সুখ ,
                                    অবসাদ , শ্রান্তি , বিষাদ , প্রশ্ন , দোষ আর
                                     স্বীকারোক্তিতেই আবদ্ধ থেকে যেতে হবেই ।
                                    আমার তো পৃথিবীই মৃত ।
 
 
কবি- মোঃ কামরুজ্জামান বাবু