মেঘে মেঘে বেলা কম হয়নি, অষ্টপ্রহর বদলের প্রবাহও থেমে নেই, চন্দ্র-সূর্যের ওঠা নামাও থেমে থাকেনি ক্ষণকালের জন্যও, বাতাসে শিসার পরিমাণ যতোই বাড়ুক, থেমে থাকছে না, ঝড় তুফানেও নরেন মুদির দোকান খোলা বন্ধ থাকছে না, আমাদের ছোট্ট গলির বখাটে ছেলেদের বুড়বুড় করে সিগারেট ফুঁকা বন্ধ হচ্ছেনা, পাড়ার সবচেয়ে ভদ্র , শিক্ষানুরাগী তাপসীর লেখাপড়া থেমে নেই বখাটেদের শত বাজে অশ্রাব্য কথোপকথনেও । কিচ্ছু থেমে নেই, কিচ্ছু না ।
রোদসী, তোর বয়স আর কতো ? চার কিংবা পাঁচ হবে ? আমি তোকে এইসব চলমান স্থানে যেতে বারণ করি। তোকে খুব ভয়ে স্কুলে নিয়ে যাই, নিয়ে আসি । বাইরে যেতে না দিলেই নানান প্রশ্নের বান ছুঁড়ে দিস প্রতিদিন। আমি কি করে বোঝাবো তোকে ? এইসব শব্দগুলো বোঝার কি কোন বয়স তোর হয়েছে ? যখন ষাট বছরের ভ্যাদা বুড়োভাম লালচে দাঁত আর যে চোখে তোকে বলেছিল- দাদুভাই, কোলে আসো, চকোলেট দিব । তুই বিঝিসনি মামণি, আমি তার চোখের দৃষ্টিতে প্রবৃত্তির এক নোংরা ছাপ দেখেছিলাম। নপুংশকতার প্রবৃত্তি, তুই বুঝবি না। আমি কপাল চাপড়াই-কেনো প্রশ্ন করিস ?
তোকে বোঝাবার ভাষা আমার নেই, সেই ভাষা তোকে বোঝাবার নয়। জানিস না, আজকাল ও-পাড়ার চাপা, বেলি, রোজিরা বাগানের বাইরে গন্ধ বিলোবার আগেই গন্ধ কু-প্রবৃত্তির মনমানসিকতার লোকেদের নাসারন্ধ্রে পৌঁছায়। অনেকটা আপনা মাংসে হরিণা বৈরি- এমনটাই কিন্তু তা তাপসী এই আক্ষেপটা করে, আমাকে বলে, আমি বুঝি, নিজের বৈরিতা নিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সেই কান্না বোঝার সময় তোর হয়নি।
আমার মানসিকতাও বোধ হয় পশুস্তরে পৌঁছে গিয়েছে।
আমার কাজের ব্যাস্ততায় তোকে তোর বাবার কাছে রেখে কিছুক্ষণের জন্য আড়াল হলেই দু-দন্ড কর্ম সেরেই বিচলিত স্বরে হাঁক ছেড়ে বলি- এই ওকে ছেড়ে দাও, আমার কাছে আসুক, কাজের ক্ষতি হবে না, আদর করারও সময় পাই না। এ আমার হীনমন্যতা হলেও আমি তা মোটেও কাটাতে পারবো না। যাই হোক, তবুও বলি- আমার কাছে পাঠাও না ! রোদসী ! মা !
-
মোঃ কামরুজ্জামান বাবু
মোঃ কামরুজ্জামান বাবু
No comments:
Post a Comment