Showing posts with label মোস্তফা কামাল. Show all posts
Showing posts with label মোস্তফা কামাল. Show all posts

Monday, November 25, 2019

জীবনকে আনন্দময় করে তুলুন

জীবন নিয়ে নানা জনের নানা মত। যার কাছে জীবন যেমন তিনি সেরকমভাবে ব্যাখ্যা করেন। কবি-সাহিত্যিকরা বলেন, জীবন এক বহতা নদী। নদী যেমন আপন গতিতে চলে; জীবনকেও নদীর মতোই চলতে দেওয়া উচিত। 
কেউ কেউ বলেন, জীবন বড় জটিল অংক। কিছুতেই একে মেলানো যায় না। নানা ঝক্কি-ঝামেলায় জীবনের নাস্তানাবুদ অবস্থা। কারো কারো কাছে জীবন আনন্দময়। যারা বলছেন আনন্দময়, তারা কি অনায়াসে এমন জীবন পেয়েছেন? তাদের কি কিছুই করতে হয়নি! নিশ্চয়ই তারা জীবনকে আনন্দময় করে তুলেছেন।
আসলে জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে হয়। সে দায়িত্ব কিন্তু নিজেরই। আপনার জীবন আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে। আপনি জীবনকে আনন্দময় করে তুলবেন, নাকি জটিল করবেন! সেটা আগে ভেবে দেখুন।
আমরা ইচ্ছা করলেই কিন্তু জীবনটাকে সহজ করে তুলতে পারি। নিজে একটু চেষ্টা করলেই অনেক জটিলতা এড়াতে পারি। জীবনে চলার পথে নানা বাধাবিপত্তি আসবে। নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হবে। সেগুলোকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, খুব ছোট কাজ কিংবা কোনো ছোট সমস্যাকেও অনেক জটিল করে তোলেন। সমস্যা যত না বড়, তার চেয়ে টেনশনের মাত্রা অনেক বেশি। এতে কী হয়! জটিলতা আরো বাড়ে। কিন্তু এর উল্টোটা হওয়া উচিত। বড় সমস্যাকে ছোট করে দেখা। বলা উচিত, এটা কোনো সমস্যাই না। তাতে টেনশন থাকবে না। টেনশন না থাকলে কাজটাও অতি সহজ হয়ে যাবে। টেনশন যত বাড়বে কাজটাও তত জটিল হবে।
অনেকে আছেন, সব সমস্যা মাথায় নিয়ে ঘোরেন। এমন একটা ভাব যেন তাকেই সব করতে হবে। কেন সব সমস্যা মাথায় নিতে হবে? তাহলে তো কোনো কাজই হবে না। ছোটখাটো সমস্যাগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে। মাথায় নেওয়া যাবে না। বড় কোনো সমস্যা সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধান করতে হবে। জটিলতা পাকানো সহজ কাজ, সমাধান করা কঠিন। সেটা ভেবে অগ্রসর হলে কোনো সমস্যাই সমস্যা না।
অনেকে আছেন মানসিকভাবেই জটিল। সবকিছুকেই তিনি জটিলভাবে দেখেন। সহজ জিনিসকেও জটিলভাবে চিন্তা করেন। তারা কখনোই জীবনকে সহজভাবে এগিয়ে নিতে পারেন না। জীবনকে সহজভাবে এগিয়ে নিতে না পারলে জীবন সত্যিই জটিল হয়ে ওঠে। এজন্য আগে জটিল মানসিকতাকে সহজ করতে হবে। সহজভাবে চিন্তা করতে হবে।
আমরা যখন একটি গ্লাসে অর্ধেক পানি দেখি তখন কেউ বলেন, অর্ধেক পূর্ণ। আবার কেউ বলেন অর্ধেক খালি। আমরা যদি পজেটিভ মানসিকতার হই তাহলে বলব, অর্ধেক পূর্ণ। আর নেগেটিভ মানসিকতার হলে বলব, অর্ধেক খালি। উভয়েই কিন্তু সঠিক তথ্যই দিচ্ছেন। তবে এখানে মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমরা সবাই যদি ইতিবাচক ভাবনা ভাবি তাহলে নেতিবাচক ভাবনাগুলি এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। থাকবে না। জটিলতাও কমে যাবে।
অনেক চাকরিজীবী আছেন, যারা অফিসের সমস্যা বাসায় এবং বাসার কিংবা পারিবারিক সমস্যা অফিসে নিয়ে আসেন। ফলে কোনোটাই তারা ঠিকভাবে করতে পারেন না। অথবা একটি করেন, অন্যটি ফাঁকি দেন। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, কোন কাজটাকে আপনি ফাঁকি দিচ্ছেন?
আপনার কিন্তু দুটো কাজই ঠিকভাবে করার কথা! আপনি তখনই দুটি কাজ ঠিকঠাকভাবে করতে পারবেন যখন অফিসের কাজ অফিসে এবং বাসার কাজ বাসায় রেখে আসবেন। কারণ, দুটি বোঝা আপনি একসঙ্গে বহন করতে পারবেন না। বিষয়টি মনে রাখলে আপনার সব কূল রক্ষা হবে।
আর জীবনকে আনন্দময় করতে হলে মাথার সব চাপ, সব ধরনের টেনশন ঝেড়ে ফেলতে হবে। আগামী দিনের কাজ নিয়ে আপনি যদি আজই হা-হুতাশ করতে থাকেন তাহলে আপনার জীবন বিষাদময় হতে বাধ্য। কাজেই বর্তমান নিয়ে ভাবুন। জীবনটাকে আনন্দময় করে তুলুন। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে মাথা নষ্ট করার কোনো দরকার নেই। 
লেখক : মোস্তফা কামাল , সাহিত্যিক ও নির্বাহী সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

আগে নিজেকে বদলাও

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অনেক কিছুই বদলাতে হয়। যুগের হাওয়ায় একটা অনাধুনিক মানুষও আধুনিক হয়ে ওঠে। উঠতে হয়। তা না হলে ছিটতে পড়তে হয়। পরিবেশ পরিস্থিতিও মানুষকে তৈরি করে। আবার কিছু জিনিস আছে সেগুলো মানুষ দেখে দেখে কিংবা ঠেকে ঠেকে শেখে। শিখে নিতে হয়।
কিছু বিষয় আছে নিজের পরিবার থেকে শিখতে হয়। আবার কিছু আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিখে নিতে হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহার, সভ্যতা, ভব্যতা মা-বাবার কাছ থেকে মানুষ শেখে। আবার বিদ্যা-শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু আচার-ব্যবহার মানুষ শেখে। এভাবেই মানুষের জীবন হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ ভালো রেজাল্ট করলে আমরা খুব বাহবা দেই। অনেকে খুব ঈর্ষা করি। ও এতো ভালো রেজাল্ট করল! আমি পারলাম না! ও যে কষ্টটা করল তা আমি দেখলাম না। ও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে লেখাপড়া করে। ও প্রতিদিন রাতে গভীর মনোযোগ দিয়ে ক্লাসের পড়া শেষ করে। ও স্কুল ফাঁকি দেয় না। হোমওয়ার্ক ফাঁকি দেয় না। ও নিয়মিত খেলাধুলা করে। ও সময় মতো ঘুমাতে যায়। অথচ আমি ওর মতো নিয়মকানুন মানি না। আমি আমার খেয়ালখুশি মতো চলি। তাহলে কি করে আমি ওর মতো ভালো করব?
চাকরি ক্ষেত্রেও অনেকে আছেন তর তর করে ওপরে উঠে যাচ্ছেন। আর কেউ একই জায়গায় পড়ে আছেন। কেন এ রকম হয়? যিনি নিয়মিত অফিস করেন, ঠিকঠাক মতো নিজের কাজটা করেন। কাজে কোনো ফাঁকি দেন না। কোনো রকম অসততা করেন না। কাজটাকে নিজের মনে করেন। তিনি যদি তর তর করে ওপরে উঠে যায় তাহলে কারো কিছু বলার থাকে? যিনি নিয়মিত অফিসের কাজ ফাঁকি দেন। ঠিকমতো অফিসে যান না। অসৎ কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাজটাকে নিজের মনে করেন না। তিনি যদি তর তর করে ওপরে উঠেন তাহলে আমরা সবাই অবাক হবো না? নিশ্চয়ই অবাক হবো।
তাহলে কি করবে হবে? নিজেকে বদলাতে হবে। নিজের পুরনো ধ্যান-ধারণাগুলো পাল্টাতে হবে। নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমি কেন পিছিয়ে, কিংবা একই জায়গায় পড়ে আছি? কেন এগোতে পারছি না, সে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
অনেকে বলেন, মানুষের অভ্যাস নাকি বদলানো যায় না। কেন যাবে না? যদি খারাপ কোনো অভ্যাস কারো থেকে থাকে; যদি তা জীবনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাহলে তা অবশ্যই বদলাতে হবে। যেমন: অনেকের আচার আচরণ ভালো নয়। অন্যকে হার্ট করে কথা বলে। কথায় কথায় অন্যকে আঘাত করে। এ ধরনের মতো কারো প্রিয় হয় না। ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। এ ধরনের অভ্যাস অবশ্যই বদলাতে হবে।
অনেকের অভ্যাস দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। রাত জাগা। আবার কারো ধূমপান, মদ্যপানের অভ্যাসও আছে। এসব অভ্যাস নাকি বদলানো যায় না। কেন যাবে না? এসব তো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। এগুলো অবশ্যই বলদাতে হবে। সবক্ষেত্রেই নিয়মানুবর্তিতা দরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষের নেতিবাচক কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জীবন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে। সে ক্ষেত্রে সেই নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো বাদ দিতেই হবে। অন্যথায় সামনে এগোনো যাবে না। নিজের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে নিজেকে বদলাতে হবে আগে।
লেখক :মোস্তফা কামাল , সাহিত্যিক ও নির্বাহী সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

চেষ্টা করলে কী না হয়!

চেষ্টায় যেকোনো অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। চেষ্টা করলে সফল হওয়া যায় না এ কথা বিশ্বাস করি না। চেষ্টা করে সফল হননি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। চেষ্টা করলে একদিক দিয়ে না হোক, আরেক দিক দিয়ে সাফল্য আসে। কোনো প্রচেষ্টাই বিফলে যায় না। এটা ধ্রুব সত্য বলে মনে করি।
আপনার কর্মস্থলে আপনি হয়তো দেখছেন, রাতদিন পরিশ্রম করেও পদোন্নতি হচ্ছে না। কিংবা বেতন বাড়ছে না। আপনি খেটে মরছেন আর আপনার একজন কলিগ গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছে। যিনি হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছেন তিনিই অতি মূল্যায়িত হচ্ছে। আপনি এসব দেখে মন খারাপ করছেন। আপনি মনে মনে ভাবছেন, আপনার কাজ কেউ দেখছে না। কেউ আপনাকে মূল্যায়ন করছে না। কী লাভ এতো এতো কাজ করে! সারাক্ষণ গাধার মতো খাটছি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
কিছু হচ্ছে না বলে কি আপনি কাজকর্ম বন্ধ করে বসে থাকবেন! কাজে ফাঁকি দেবেন? নাকি আরো বেশি বেশি চেষ্টা করে যাবেন? আপনিই চিন্তাভাবনা করে বলেন তো!
অবশ্যই আপনি কাজের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবেন। আপনি আরো বেশি আন্তরিক হবেন। দেখবেন, আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে মূল্যায়ন না করলেও অন্য প্রতিসমান থেকে এমন অফার পাবেন যা আপনি হয়তো কল্পনাও করেননি। এটাই প্রকৃতির বিচার। প্রকৃতির জাজমেন্ট কিন্তু ভয়ংকর! প্রতিটি মানুষকেই প্রকৃতির বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
যে মানুষটি কাজে ফাঁকি দিচ্ছে সে কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছে। একটা সময় কাজ তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। চেষ্টা করেও তখন সে আর কাজকে ধরতে পারে না। কাজ তার কাছে আর ধরা দেয় না। আস্তে আস্তে সে অকাজের লোকে পরিণত হয়। তখন চেষ্টা করেও সে আর নিজেকে কাজের মধ্যে সম্পৃক্ত করতে পারে না। সে তখন ভিন্ন পথ বেছে নেয়। সেই ভিন্ন পথটা কি? সেই পথটি হচ্ছে ফাঁকিবাজ, চাপাবাজ, আর তোষামদকারীর পথ। লোকটির তখন মেরুদণ্ড বলে কিছু থাকে না।
বস হয়তো তাঁকে বকছেন, গালমন্দ করছেন। আর তিনি বসের সামনে হাত কচলাচ্ছেন। বসের বকা শেষ হলে আবার তিনি গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। এমন ভাব করেন যেন তার কিছুই হয়নি। কিছুক্ষণ বাদেই তিনি স্বরূপে আভির্ভূত হন। তিনি বসকে সন্তুষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কোনো কথা বললে বস খুশি হবেন ইনিয়ে বিনিয়ে সেই কথা বলতে থাকেন। আসলে তাদের একটাই কাজ, বসকে খুশি রাখা।
কাজের লোকরা কিন্তু এটা কখনোই করেন না। তারা কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কাজটাকেই তারা বড় করে দেখেন। আর সেই কাজই তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কখনো কখনো তিনি লিফটের গতিতে এগিয়ে যান।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, বসকে খুশি রাখলে হয়তো সাময়িক সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু তেলবাজি কিংবা তোষামোদি করে খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না। বরং তার নিজের জায়গাটাও ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। একটা সময় তাকে চাকরি হারাতে হয়। আর কাজ মানুষকে তার স্বপ্নের সমান বড় করে। কোনো কোনো কাজের মানুষের ক্ষেত্রে এমন ঘটে যে, তার প্রাপ্তি কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। 
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়েন। নতুন করে শুরু করতে চান না। শুরু করতে পারেন না। অথচ আলিবাবার কর্ণধার জ্যাক মা’র কথা চিন্তা করুন। তিনি লেখাপড়ায় ব্যর্থ, চাকরি করতে গিয়ে ব্যর্থ। ব্যবসা করতে গিয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। যে জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন সেটাকে তিনি অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরে নিয়েছেন। আবার নতুন করে শুরু করেছেন। অনলাইন শপিং স্টোর আলিবাবা করেই তিনি বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন হয়ে ওঠেন। 
লেখক : মোস্তফা কামাল , সাহিত্যিক ও নির্বাহী সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

হতাশায় যেন পেয়ে না বসে

মোস্তফা কামাল 


তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।
হতাশা একটা মানসিক রোগ। এটা যেকোনো প্রাণঘাতী রোগের মতোই ভয়াবহ। হতাশা যাকে গ্রাস করে তাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। ভাইরাসের মতো এটি একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে। এর নেতিবাচক প্রভাবে আশপাশের লোকজনও আক্রান্ত হতে পারে।
আমরা অনেক সময় দেখি, পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো না করায় ছেলে-মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেন তারা আত্মহত্যা করে? কারো ওপর রাগ করে? নিশ্চয়ই নয়। পাস না করার লজ্জা, হতাশা থেকে আত্মহত্যা করে। অনেকে চাকরি না পেলে হতাশায় ভেঙে পড়ে। অনেক সময় আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। আবার অনেকে পারিবারিক চাপ সহ্য করতে না পেরেও আত্মহত্যা করে। হতাশা এমনভাবে তাদের পেয়ে বসে যে, তারা আত্মহত্যা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খুঁজে পায় না।
আত্মহত্যাই কি এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান? নিশ্চয়ই তা নয়। তাহলে কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে? কেন নিজেকে শেষ করে দিতে হবে? কেন হতাশা গ্রাস করবে?
সংকট যত কঠিনই হোক, তার সমাধান অবশ্যই আছে। সংকটে পড়লেই হতাশায় কাতর হতে হবে কেন?  সংকট মোকাবেলার জন্য পথ খুঁজতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। সংকটে পড়লে মাথা গরম না করে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে। কী করে সমাধান বের করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, হতাশা জিইয়ে রাখলে হতাশা বাড়ে। হতাশায় পেয়ে বসার আগেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে মা-বাবা, ভাইবোন কিংবা নিকটাত্মীয়দের কারো সঙ্গে হতাশার বিষয়টি শেয়ার করা যায়। যে সমস্যায় আপনি ভারাক্রান্ত তা সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে। আবার মনের দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করলেও অনেক সময় হালকা হওয়া যায়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই রেজাল্ট খারাপ হলেই হতাশায় ভেঙে পড়ে। তখন তারা লেখাপড়ায় আরো বেশি অনমনোযোগী হয়। এতে ফল আরো খারাপ হয়। যেকোনো পরীক্ষায় ভালো-মন্দ থাকবে। সব সময়ই যে একরকম ভালো হবে তা নয়। কখনো কখনো খারাপ হতেই পারে। সেজন্য ভেঙে পড়লে চলবে না। রেজাল্ট খারাপ হলে লেখাপড়ায় মনোযোগ আরো বাড়াতে হবে। লেখাপড়ার প্রতি আরো বেশি যত্নবান হতে হবে।
অনেকে লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য ঘুরছেন। পাচ্ছেন না। তারা হতাশায় ভোগেন। আমরা তো সবাই জানি, এখন প্রতিযোগিতার বাজার। সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রতিযোগিতা। শুধু পাঠ্যবই পড়ে লেখাপড়া শেষ করলেই হবে না।
বিজ্ঞজনরা বলেন না পুঁথিগত বিদ্যা আর পরহস্ত ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন। এখনকার চাকরির বাজার অনেক কঠিন। ছাত্রজীবন থেকেই চাকরির বাজারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। সৃজনশীল বই পড়তে হবে। বিশ্ব সম্পর্কে ভালো ধারনা না থাকলে প্রতিযোগিতায় টেকা যাবে না।
অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান কষ্ট করে লেখাপড়া করে। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করে যে চাকরি পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হয়তো তার পরিবারের সদস্যরা বড় ছেলে বা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চাকরি হলে তাদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসবে। অথচ চাকরি পাচ্ছে না। তারা বেশি হতাশায় ভোগে। হতাশ না হয়ে মনোবল শক্ত করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হতাশায় পেয়ে বসলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। কাজেই যে কোনো পরিস্থিতিতে আশা জাগিয়ে রাখতে হবে।
লেখক :মোস্তফা কামাল  , সাহিত্যিক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

মানবতা পরম ধর্ম



শুরুতেই একটি পুরনো গল্প বলছি। তখন ১৯৪৬ সাল। ভারতবর্ষজুড়ে দাঙ্গার ঘটনা ঘটছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। মারামারি কাটাকাটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করে কিছু করতে পারছে না।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গার ঘটনার বিস্তার ঘটেছে বাংলাদেশে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় দাঙ্গার ঘটনা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য নানামুখি তৎপরতা চালাচ্ছেন। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
পুরনো ঢাকায় কয়েকজন মুসল্লি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে স্বামী-স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে দৌড় শুরু করেছে। এক পর্যায়ে তারা এক মুসলমান পরিবারের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির কর্তা দরজা বন্ধ করে দেন। বাড়িতে যারা ঢুকেছে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখেন, তারা হিন্দু পরিবার। ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।
বাড়ির কর্তা ভীতসন্ত্রস্ত পরিবারটিকে হাতের ইশারায় আশ্বস্ত করলেন। কিন্তু হিন্দু পরিবারটিকে তাড়া করতে করতে আসা মুসল্লিরা বাড়ির সামনে এসে হৈচৈ শুরু করল। চিৎকার করে বলল, ওদেরকে বের করে দাও। ওদেরকে আমরা চিরতরে শেষ করে দেবো।
দরজা খুলে বাড়ির কর্তা সটান দাঁড়িয়ে বললেন, ওরা আমার মেহমান। আমার জীবন থাকতে ওদের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না।
মুসল্লিরা কিছুক্ষণ হৈচৈ করে বলল, এসব আপনি কি বলেন? ওরা হিন্দু; ওরা আপনার মেহমান হয় কি করে?
ওরা হিন্দু না মুসলমান সেটা দেখার বিষয় নয়। ওরা মানুষ। আমার কাছে ধর্মের চেয়ে মানবতা বড়।
মুসল্লিরা হৈচৈ করে চলে গেলো। বাড়ির কর্তাও হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
একই রকম আরেকটি ঘটনা তখন কলকাতায় ঘটেছিল। সেখানে অসংখ্য মুসলিম পরিবার হামলার শিকার হয়। হামলার সময় একটি মুসলিম পরিবার জীবন রক্ষার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ওই পরিবারে ছিল দুই যুবতী কন্যা। চারদিক থেকে যখন হামলা হচ্ছিল তখন তারা বেদিশা হয়ে পড়েছিল। কোথাও লুকাবার জায়গা পাচ্ছিল না। এ রকম এক সংকটময় মুহূর্তে এক হিন্দু ভদ্রলোক পরিবারটিকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলেন। তিনি তার বাড়িতে আশ্রয় দিলেন।
আশ্রয় দেয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। হিন্দুরা এসে ভদ্রলোকের বাড়ি ঘেরাও করল। মুসলিম পরিবারটিকে ছিনিয়ে নিতে চাইল। কিন্তু ভদ্রলোক অনড়। তিনি জীবন দিয়ে হলেও মুসলিম পরিবারটিকে রক্ষা করবেন বলে জানিয়ে দিলেন।
হিন্দুরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, একটা মুসলিম পরিবারকে কেন্দ্র তুমি আশ্রয় দিয়েছ? তাদেরকে আমাদের হাতে ছেড়ে দাও। আমরা ওদের প্রাণ বিনাশ করব।
ভদ্রলোক বললেন, আমার কাছে হিন্দু মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মানুষ। আমার কাছে বড় হচ্ছে মানবতা।
হিন্দুরা হৈচৈ করে বিদায় নিল। এভাবেই রক্ষা পেল একটি পরিবার।
এবার চীন সফর প্রসঙ্গে বলি। বেশ কিছু দিন আগে চীন সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম ৫০ শতাংশ মানুষই ধর্ম মানে না। তারা মানবতায় বিশ্বাসী। তারা মনে করে, মানব ধর্মের চেয়ে পরম ধর্ম আর নেই।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু কত শতাংশ মানুষ মানবিক? ইসলাম শান্তির ধর্ম, সম্প্রীতির ধর্ম, মানবিকতার ধর্ম। আমরা সেটা কতটুকু মানি? আমাদের আরো বেশি মানবিক হতে হবে। অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে। মনের পশুত্ব দূর করতে হবে। নিষ্ঠুরতা পরিহার করতে হবে। তা না হলে সত্যিকারের মানুষ হওয়া যাবে না।
লেখক :মোস্তফা কামাল  , সাহিত্যিক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে  শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।

আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি? আমরা কি হতে চাই? কি করতে চাই? তা আগেই; মানে স্কুল জীবন থেকেই স্থির করতে হবে। লক্ষ্য স্থির থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাড়না তৈরি হয়। সেই তাড়নাই মানুষকে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে দেয়। ক্ষণে ক্ষণে লক্ষ্য পরিবর্তন হলে কখনোই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।
ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা লক্ষ্য স্থির করতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। ভবিষ্যতে কি হতে চায় তা তারা ঠিক করতে পারে না। অনেকে আছে, যারা সবকিছুই হতে যায়। বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ডাক্তার কিংবা উদ্ভাবক। সব হতে গিয়ে কোনোটাই হওয়া হয় না।
মানুষের ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে মস্তিস্কের একটা ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। কোনো মানুষ ইতিবাচক চিন্তা করলে তার মস্তিস্ক ইতিবাচক কাজ করে। আর কেউ নেতিবাচক চিন্তার হলে নেতিবাচক কাজ করে। কেউ যদি মনে মনে চিন্তা করে যে, সে বিজ্ঞানী হবে। তাহলে তার মস্তিস্ক তাকে সেইভাবে তৈরি করে। মস্তিস্ককে যে যেভাবে ব্যবহার করে সেভাবেই মস্তিস্ক কাজ করে।

এ প্রসঙ্গে আমি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমাদের গ্রামে এক হাতুড়ে ডাক্তার ছিলেন। তার নাম আবদুল করিম। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। গ্রামে ওষুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। গ্রামের মানুষ তাকে হাতুড়ে ডাক্তার বলেই ডাকতেন। তাকে কেউ ভালো চোখে দেখতেন না।
আবদুল করিমের ছেলে আবু কায়সার ভীষণ মেধাবী ছাত্র। সে নিজের চোখে দেখে আসছে, গ্রামের লোকজন তার বাবাকে কতটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। সে মনে মনে সংকল্প করেছে, বড় হয়ে সে ডাক্তার হবে। এমন ডাক্তার হবে যাতে তার বাবার দুর্নাম ঘুচে যায়।
আবু কায়সার দিন দিন লেখাপড়ায় ভালো করতে থাকে। এসএসসি, এইচএসসিতে খুব ভালো ফল করে। তারপর সে ভর্তি হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ডাক্তারি পড়া শেষ করে সে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ পায়। সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসে। সে সোজা চলে যায় নিজের গ্রামে।
আবু কায়সারের হাতের যশ ভালো। তার যে রোগী আসে সেই ভালো হয়ে যায়। অল্প দিনের মধ্যেই আবু কায়সারের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঘুচে যায় তার বাবার দুর্নাম। আবু কায়সারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় সে মহাখুশি।
স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলছি, সময় থাকতেই লক্ষ্য স্থির করে ফেলো। জীবনে সাফল্য পেতে হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। লক্ষ্য স্থির থাকলে সেখানে পৌঁছানো যাবেই। তবে হ্যাঁ, লক্ষ্য স্থির করে বসে থাকলে চলবে না। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আমি আমার জীবনেও তার প্রমাণ পেয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম, আমি লেখক-সাংবাদিক হবো। সেই ভাবনা থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ করলাম। ধীরে ধীরে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে এগোতে থাকলাম। স্কুল জীবন থেকেই সংবাদ পত্রিকা পড়তে পড়তে ভাবতাম, এই পত্রিকাতে আমার ক্যারিয়ার শুরু করব।

কী বিধির বিধান! আমি সংবাদেই আমার ক্যারিয়ার গড়লাম। তারপর টানা ২৭ বছরের লেখালেখি ও সাংবাদিকতার জীবন। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি।
লেখক: মোস্তফা কামাল , সাহিত্যিক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

মানুষ বাঁচে তার কর্মের গুণে

তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।

কথায় বলে, যেমন কর্ম তেমন ফল। আবার বলা হয়, জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো। কর্ম ভালো না হলে রাজপরিবারে জন্ম নিয়েও কোনো লাভ নেই। আবার অতি সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েও কর্মের গুণে মানুষ উঁচু স্থান দখল করতে পারে।
আসলে কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত না। একটা ছোট কাজ থেকেও বড় কিছু অর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু কাজটাকে ভালোবাসতে হবে। সম্পূর্ণ আন্তরিকতা ও দরদ দিয়ে কাজটা করতে হবে। ফাঁকিবাজি করলে কিংবা তুচ্ছাতাচ্ছিল্য করে কাজ করলে তাতে সফলতা আসে না।
লেখাপড়া করতে গেলে যেমন প্রথমে 'অ আ ক খ' কিংবা 'এ বি সি ডি' পড়তে হয়। স্কুলে প্লে গ্রুপ কিংবা ওয়ানে ভর্তি হতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে ওপরের ক্লাসে উঠতে হয়। লেখাপড়ায় মনোযোগ না থাকলে, আন্তরিক না হলে যেমন ক্লাসে ভালো করা যায় না, পড়ায় ফাঁকি দিলে অনেক সময় ওপরের ক্লাসেও ওঠা যায় না।
লেখাপড়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় চলে যায়। সেই সময়ে চড়াই উৎরাই থাকে। থাকে টানাপড়েন। কখনো হোঁচট খেতে হয়। কখনো পা মচকায় আবার ভেঙেও হয়তো যায়। তারপরও কিন্তু এগিয়ে যেতে হয়। কেউ যদি কোনো ক্লাসে একবার অকৃতকার্য হয় তখন যদি সে লেখাপড়া থামিয়ে দেয় তাহলে কি এগোতে পারবে? পারবে না। তার মানে তাকে আবার পুর্নোদ্যমে শুরু করতে হয়।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য। চাকরি কিংবা ব্যবসা করতে গেলে গোড়া থেকে শুরু করতে হয়। শুরুতেই কেউ সচিব, অতিরিক্ত সচিব হয়ে যায় না। চাকরি জীবনেও নানা স্তর আছে। প্রতিটি স্তরেই তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। সেখানেও তাঁকে নানা বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে যেতে হয়।
আমাদের দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর গল্প শুনেছি। তারা কেউই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি। কর্মজীবনের শুরুতে তাঁরা যখন ব্যবসা শুরু করেছেন তখন তাঁদের হাতে কেমন টাকা পয়সা ছিল না। তারা প্রায় শূন্য থেকে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে তারা ওপরের দিকে উঠে আসেন। যিনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি হয়তো একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই গড়েন। সেই প্রতিষ্ঠান হয়তো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা মানুষটি বেঁচে থাকেন।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে আমি স্বপ্নবাজ মানুষ মনে করি। বড় স্বপ্ন না থাকলে তিনি এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়তে পারতেন না। তিনি শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই। সেই পথচলা ছিল খুবই ছোট্ট পরিসরে। ধীরে ধীরে স্বপ্ন বুনতে বুনতে তিনি উঠে গেলেন স্বপ্নের চূড়ায়। ব্র্যাক দাঁড়াল মাথা উঁচু করে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়ে পরল এর কর্মপরিধি।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্র্যাকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি আর্থ-সামাজিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন স্যার উপাধি। একদিন তিনি থাকবেন না; থাকবে তাঁর রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফজলে হাসান আবেদ বেঁচে থাকবেন। এভাবেই মানুষ তাঁর কর্মের মাঝে বেঁচে থাকেন।
লেখক :মোস্তফা কামাল , ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও সাহিত্যিক 

ধৈর্য ধারণ একটি মহৎ গুণ

তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে  শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।
কথায় আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। মহান সৃষ্টিকর্তা নাকি সব সময় ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। যেকোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে অসীম ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। মাথা গরম করলে কিংবা ধৈর্য হারালে বিপদে পড়তে হয়। এ কথা হয়তো আমরা সবাই জানি। তারপরও ধৈর্য ধারণ করতে পারি না। অল্পতেই অধৈর্য হয়ে যাই।
একটি কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, যা হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তাতে ভালো কিছু থাকে না। গলদ থাকার আশঙ্কাই বেশি থাকে। চেষ্টা করে করে যা অর্জন করা যায় তা অবশ্যই কল্যাণকর। যারা খুব দ্রুত সবকিছু পেয়ে যান তাদের দ্রুতই পতনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়। যারা অনেক কষ্ট সাধন করে অর্জন করেন তারা অনেক দুর্যোগ দুর্বিপাকেও অটল থাকেন।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কোনো একটা খাতে বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগের পরই তিনি লাভ করতে চান। ব্যবসায় যে ঝুঁকি থাকতে পারে কিংবা লাভ পেতে হলে যে একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তা তারা মানতে রাজি নন। তারা হয়তো একটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। দ্রুত লাভ না পেয়ে ওই ব্যবসা ছেড়ে আরেক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। এভাবে একের পর এক ব্যবসা বদল করতে থাকেন। এটা ঠিক নয়। যেকোনো একটাকে ধরে রাখুন। ধৈর্য ধরুন। নিষ্ঠার সাথে কাজটা সম্পন্ন করুন। দেখবেন সফলতা আসবেই।
দুর্নীতি, অন্যায় অনিয়ম করে যে কেউ দ্রুতই বিত্ত-বৈভবের মালিক হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে গতিতে অর্থবিত্তের মালিক তিনি হয়েছেন তার চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে পতন ঘটবে। এটাই প্রকৃতির বিধান। আর যিনি সততা ও কর্মনিষ্ঠা দিয়ে অর্থ-বিত্তের মালিক হবেন তার পতনের ঝুঁকি কম।
আমরা অনেক সময়ই দেখি, কেউ কেউ চাকরি ক্ষেত্রে নানা কৌশল করে তর তর করে ওপরে উঠতে থাকেন। যখন ওপরে উঠেন তখন আর কোনো কিছু পরোয়া করেন না। হিতাহিত জ্ঞানও তাদের লোপ পেয়ে যায়। তাদের যখন পতন ঘটে তখন আর তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।
অনেকে আপসোস করেন, এখনো কিছু করতে পারলাম না। এখনো কিছুই হলো না। আবার অনেকে ভাগ্যকে দোষ দেন। কেউ যদি ভাগ্যকেও বিশ্বাস করেন তাহলে বলবো, ভাগ্যের চাকা ঘুরতে কিন্তু বেশি সময় লাগে না। আপনি ধৈর্য নিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করুন। অচিরেই দেখবেন, ভাগ্য আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে।
আসলে সবকিছুর মূল হচ্ছে কাজ। কর্মনিষ্ঠা ছাড়া কেউই উন্নতি সাধন করতে পারে না। আর তর তর করে উন্নতি করলে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। একটা ইমারত যখন নির্মাণ করা হয় তখন ইটের পর ইট গেঁথেই কিন্তু তা নির্মিত হয়।
জীবনটাও একটা ইমারতের মতো। একে পরম যত্নে লালন করতে হয়। স্বপ্ন বুনতে বুনতে এগোতে হয়। জীবনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়। অনেক সময় পা পিছলে আছড়ে পড়তে হয়। হোঁচট খেয়ে পা মচকেও যেতে পারে। তাই বলে কি জীবন থেমে থাকে?
সবসময় হয়তো জীবনকে সমানভাবে টেনে নেওয়া যায় না। উত্থান-পতন থাকে। শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন থাকে। সেসব পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। এই যে দীর্ঘ পথচলায় জটিল-কুটিল পথ পাড়ি দিতে অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হয়। অধৈর্য হয়ে গেলে কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয় না। কাজেই ধৈর্য ধারণ করাই উত্তম। 
 
লেখক : মোস্তফা কামাল , ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও সাহিত্যিক। 
- কালের কণ্ঠ 

হাল ছেড়ো না বন্ধু



তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।
সম্ভাবনা এবং বিপদ একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। জীবনে চলার পথে অনেক ধরনের বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। বিপদও ঘটতে পারে। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে! হিমালয়ের চূড়ায় উঠতে হলে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে হয়। যারা পাহাড় বেয়ে ওঠে তারা সবাই জানে, পা ফসকে পড়লেই নির্ঘাত মৃত্যু। সেই মৃত্যুর আশঙ্কা উপেক্ষা করেই তো মানুষ হিমালয় পর্বতের চূড়ায় ওঠে এবং হিমালয় জয় করে।
ভয়ংকর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যে মানুষ জন্ম লাভ করে তাকে তো প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগোতে হয়। চ্যালেঞ্জ না নিলে তো কোনো সম্ভাবনাই তৈরি হবে না। আকাশ ভেঙে পড়ার ভয়ে কেউ যদি বাড়ির বাইরে না যায় তাহলে সফলতা তার কাছে কখনোই ধরা দেবে না। বরং পদে পদে সে বিপদে পড়বে।

অনেক সময়ই আমরা দেখি, ব্যর্থ হয়ে অনেকে ভাগ্যকে দোষ দেন। সফল না হলে অনেকে বলেন, কপাল মন্দ, তাই সফল হতে পারলাম না। অনেকে জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে বলেন, দেখেন তো ভাই, আমার ভাগ্য খুলবে কবে? কিংবা বলেন, আমার ফাড়া কতদিন থাকবে?
মানুষের ভাগ্যের কথা যদি জ্যোতিষ বলতে পারত তাহলে তো নিজের ভাগ্যই পরিবর্তন করে ফেলতো। জ্যোতিষগিরি করতে হতো না।
বার বার ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত অনেকে আবার ছুটে যান পীর-ফকিরের কাছে। বিপদে যেন তারাই রক্ষাকর্তা! এ কথা কেউ ভাবে না যে, কোনো মানুষই শতভাগ সফল নয়। আজ যিনি সফল তিনি নিশ্চয়ই জীবনের শুরুতে অনেক ধকল সয়েছেন।
আগে আমরা শুনতাম, কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। জীবনের শুরুতে প্রত্যেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগোতে হয়। আমরা মানুষের সাফল্যগাঁথা দেখে আনন্দিত হই। কিন্তু সেই সাফল্যের পেছনে কত শ্রম-ঘাম ঝরাতে হয়েছে তা আমরা অনুভব করতে চাই না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, রাত না থাকলে আমরা দিনের মর্ম বুঝতে পারতাম না। রাত কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রাতের আঁধার কেটে সূর্য উঠবেই। মানুষের জীবনও তাই। সারাজীবন কোনো মানুষের জীবনে বিপদ থাকে না। দুঃখ থাকে না। ভালো সময় আসে। ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দুঃসময় থেকে সুসময়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হয়। সময়টাকে বদলাতে কেউ হয়তো একবারই পারে। আবার কেউ সাতবারের প্রচেষ্টার পর সফল হয়।
একবার হয়নি বলে যে দ্বিতীয়বার হবে না বা দ্বিতীয়বার হয়নি বলে যে তৃতীয়বার হবে না তা মনে করা ঠিক না। মানুষের জীবনে ব্যর্থতা একটা অভিজ্ঞতা। কোনো মানুষই বলতে পারবে না যে, তার জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই। মনে রাখতে হবে, যতবার ব্যর্থ হবে ততবারই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে লাগবে। 
অনেকে বার বার ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেন। এটা ঠিক নয়। কোনো অবস্থাতেই হাল ছেড়ে দিতে নেই। হাল ছেড়ে দিলেই সব শেষ! চরম দুর্যোগে কিংবা সংকটে যে মনোবল শক্ত রাখতে পারে তার জীবনে সফলতা আসবেই।
লেখক : মোস্তফা কামাল , ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও সাহিত্যিক। 
- কালের কণ্ঠ